বাল্যবিবাহের হার বেশি রংপুরে

বাল্যবিবাহের হার বেশি রংপুরে


অনলাইন ডেস্ক: ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ১৮ বছরের কম বয়সী কন্যাশিশুর মধ্যে ৪১ দশমিক ৬ শতাংশের বাল্যবিবাহ হয়েছে। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০২১ সালে ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ৩১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। একই সময়ে ১৫ বছর কিংবা তার কম বয়সী কন্যাশিশুর মধ্যে বাল্যবিবাহের হার ছিল ৮ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। গ্রামীণ এলাকায় ১৮ বছরের নিচে বাল্যবিবাহের হার ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

এই তথ্য জানানো হয় মঙ্গলবার (২০ মে) রংপুর মহানগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘বাল্যবিয়ের পরিণতি ও করণীয়’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায়। জয়েন্ট অ্যাকশন গ্রান্ট প্রজেক্টের আয়োজন, মালালা ফান্ডের সহযোগিতা ও পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি) এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন (বিডিওএসএন)-এর উদ্যোগে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালায় সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, ধর্মীয় নেতা, কাজী, মানবাধিকারকর্মী ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনে বাল্যবিবাহের কারণ, প্রতিরোধে করণীয় এবং এর প্রভাব তুলে ধরেন পপি’র কনসোর্টিয়াম কো-অর্ডিনেটর কাজী আব্দুল্লাহ রিজভান। তিনি জানান, ২০২৩ সালে গর্ভবতী নারীদের ২৫ শতাংশের বয়স ছিল ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় বাল্যবিবাহে বাংলাদেশ প্রথম এবং বিশ্বে অষ্টম।

কর্মশালার সভাপতিত্ব করেন পপি’র নির্বাহী পরিচালক আরিফুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু সাঈদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর সাবেক এপিপি অ্যাডভোকেট আফরোজা শারমিন কনা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ এবং ইন্টারন্যাশনাল গ্রামার স্কুলের চেয়ারম্যান সেরাফুল হোসেন হিমেল।

আলোচকরা জানান, দেশে বাল্যবিবাহের হার প্রায় ৫০ শতাংশ হলেও রংপুর বিভাগে এ হার ৬৮ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হয় রংপুর ও লালমনিরহাট জেলায়। রংপুরে এই হার ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং লালমনিরহাটে ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ। বিভাগজুড়ে ১৬ বছরের আগে বাল্যবিবাহের হার ৩৮ শতাংশ, যেখানে রংপুরে ২৫ শতাংশ এবং লালমনিরহাটে ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বাল্যবিবাহের হার বেশি—রংপুর শহরে ৪০ শতাংশ, গ্রামে ৫৬ শতাংশ; লালমনিরহাটে এই হার সমান।

বাল্যবিবাহের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়—দারিদ্র্যতা, সাংস্কৃতিক গ্রহণযোগ্যতা, কমিউনিটি ও স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর যোগাযোগের অভাব, ভৌগোলিক অবস্থান, নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিক সচেতনতার অভাব। বক্তারা বলেন, বাল্যবিবাহের ফলে একজন শিশুর পেটে আরেকটি শিশু আসে, যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। এতে অপুষ্টি, জরায়ু ক্যানসার ও শিশু মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

সাংবাদিক আরিফুল হক রুজুর সঞ্চালনায় কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাগমা শিলভীয়া খান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোঃ আরিফ মাহফুজ, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌসুমী আখতার, সমবায় কর্মকর্তা মো. আফতাবুজ্জামান, সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেকুর রহমান, জেলা মডেল মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, কাজী হাফিজ মুহাম্মদ আব্দুল কাদির, মানবাধিকারকর্মী সামসে আরা বিলকিস এবং সাংবাদিক ফরহাদুজ্জামান ফারুক।

অংশগ্রহণকারীরা বলেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সমাজের সব স্তরের মানুষকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।


নবীনতর পূর্বতন