ফুলছড়িতে টিআর, কাবিখা-কাবিটা প্রকল্পে উন্নয়নের নবজাগরণ

ফুলছড়িতে টিআর, কাবিখা-কাবিটা প্রকল্পে উন্নয়নের নবজাগরণ

 

শাহ আলম যাদু, ফুলছড়ি (গাইবান্ধা): বন্যাপ্লাবিত ও নদী ভাঙ্গনের জনপদ হিসেবে পরিচিত গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা। পদে পদে নদীভাঙন, বর্ষায় কাদাজলমাখা ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট আর নিত্য দুর্ভোগ যেন এখানকার মানুষের জীবনের অংশ ছিল। কিন্তু সময় বদলাচ্ছে। সরকারের টিআর (টেস্ট রিলিফ), কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) ও কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পের সুফল এখন পৌঁছে গেছে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। অবকাঠামো উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় জেগে উঠেছে নতুন সম্ভাবনা, বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনধারা।

ফুলছড়ির ৭ টি ইউনিয়নে চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়িত হয়েছে ২ শতাধিক প্রকল্প। এগুলোর মাধ্যমে সংস্কার হয়েছে রাস্তাঘাট, নির্মিত হয়েছে ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়ের সংস্কার, এমনকি কবরস্থানেও এসেছে উন্নয়নের ছোঁয়া।

সরেজমিনে দেখা যায়, গজারিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে বড় ব্রিজ থেকে আদর্শগ্রাম পর্যন্ত দীর্ঘদিনের কাদামাটির রাস্তা সংস্কার করে নতুন রূপ পেয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

এই প্রকল্পের সভাপতি জিহাদুর রহমান মওলা বলেন,“আগে বর্ষায় হাঁটু সমান পানি জমতো। মানুষকে ভিজে কাদা মাড়িয়ে চলাচল করতে হতো। এখন মাটি কেটে সংস্কারের পর সেই দুর্ভোগ নেই। মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারছে।”

একই এলাকার গৃহবধূ রোকেয়া বেগম বলেন, “বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া-আসায় অনেক কষ্ট হতো। বর্ষায় কাদা-মাটিতে পড়ে যাওয়ার ভয় ছিল সবসময়। এখন রাস্তার কাজ হওয়ায় নিরাপদে যাতায়াত করতে পারছে।”
উড়িয়া ইউনিয়নের ছায়দার মেম্বরের বাড়ির সামনে ওয়াপদা বাঁধের আরসিসি স্লোপ নির্মান প্রকল্পের সভাপতি ছায়দার রহমান বলেন, এখানে আরসিসি স্লোপ নির্মানের ফলে মানুষের অনেক উপকার হয়েছে। ১ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্পের সুফল লোকজন ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছে।
উদাখালী ইউনিয়নের কাঠুর নীলেরভিটা ক্লিনিকের মোড় হতে কাঠুর বিল ব্রীজ পর্যন্ত রাস্তার মেরামতে ৯ দশমিক ৯৩০ মেট্টিকটন গম বরাদ্দ প্রদান করা হয়। কাঠুর গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান বলেন, রাস্তাটি মেরামতের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। আগে এই রাস্তায় ভ্যান চলাচলে অসুবিধা হতো এখন আর সে সমস্যা নাই। এই রাস্তা মেরামতের ফলে পার্শ্ববর্তী উড়িয়া ইউনিয়নে যাতায়াত করতে সময় কম লাগছে।

ফুলছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার টিআর প্রকল্পের ১ম ও ২য় পর্যায়ের ৭২ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় এতে বরাদ্দের পরিমান ছিল ১ কোটি ৫১ লক্ষ ৪৬ হাজার ১০৭ টাকা। ৩য় পর্যায়ের ৩৮ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় এতে বরাদ্দের পরিমান ছিল ৭৫ লক্ষ ৭৩ হাজার ৫৩ টাকা। কাবিটা প্রকল্পের ১ম ও ২য় পর্যায়ের ৫১ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় এতে বরাদ্দের পরিমান ছিল ১ কোটি ৫৮ লক্ষ ২১ হাজার ৯৫৫ টাকা। ৩য় পর্যায়ের ২৭ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় এতে বরাদ্দের পরিমান ছিল ৭৯ লক্ষ ১০ হাজার ৯৭৭ টাকা। কাবিখা প্রকল্পের ১ম ও ২য় পর্যায়ের ২৫ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় এতে বরাদ্দের পরিমান ছিল ১১৩ দশমিক ০১৪ মেট্টিকটন গম ও ১১৩ দশমিক ০১৪ মেট্টিকটন চাল। ৩য় পর্যায়ের ১৬ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় এতে বরাদ্দের পরিমান ছিল ৪৫ দশমিক ২০৬ মেট্টিকটন গম ও ৪৫ দশমিক ২০৬ মেট্টিকটন চাল।

ফুলছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এস.এম. আবু মোতালেব বলেন, “সকলের সহযোগিতা ও নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রেখে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমি যতদিন এ উপজেলায় দায়িত্বে আছি, ইনশাআল্লাহ কাজের মান ও গতি ধরে রাখা হবে।”

ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জগৎবন্ধু মন্ডল বলেন, “আমি নিজে একাধিক প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করেছি। প্রতিটি প্রকল্পই মানসম্মতভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সাধারণ মানুষ এর সুফল পাচ্ছে, এটিই আমাদের বড় অর্জন।”

এবারের জনবান্ধব প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ফলে ফুলছড়ির প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করছে, এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে উপজেলার চিত্র আরও বদলে যাবে।

নবীনতর পূর্বতন